রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চলছে দেশের অর্থনীতি সংস্কার কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী থেকে অর্থ জোগাড়ে অনেক সাফল্য দেখিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত হাজার কোটি ডলারের বেশি ঋণের আশ্বাস পেয়েছে তার সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরেই মিলেছে অন্তত পৌনে সাত বিলিয়ন ডলার পাওয়ার আশ্বাস।
বাংলাদেশ সংস্কারে ৩৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে নতুন ঋণ ২০০ কোটি ডলার আর বাকি ১৫০ কোটি ডলার আসবে চলমান প্রকল্প এগিয়ে নিতে।
চলমান ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির বাইরে বাংলাদেশকে আরও ৩০০ কোটি ডলার দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে দিচ্ছে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা।
জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারে সংস্থাটি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ মিলতে পারে আরও ৫০ কোটি ডলার।
কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে চামড়া শিল্পে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি সম্ভব : আগামী তিন বছরে বাংলাদেশকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নে জার্মানি আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে দেবে ১০০ কোটি ইউরো।
এ ধরনের বাজেট সহায়তা ও পলিসি বেজড ঋণ দেশের রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পে ব্যবহারেরও বাধ্যবাধকতা থাকে না। এ ছাড়া সরকারের বৈদেশিক সূত্র থেকে ঋণ নেওয়া দেশের বেসরকারি খাতের জন্য ভালো বলেই মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তবে পরিশোধের চাপ সামলাতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়াতে ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের তাগিদ তাদের।
রিজার্ভ বাড়াতে ও বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নেওয়াকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈদেশিক ঋণ পাওয়া এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যেই ঋণ আসছে সেটা কিন্তু বাজেটারি সাপোর্ট হিসেবে সর্বোচ্চটা আসছে। অর্থাৎ এটা দেশের কোনো একটা সুনির্দিষ্ট প্রকল্পে নয়, সরকার বিভিন্ন খাতেই ব্যবহার করতে পারবে। তবে জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাত সংস্কারে এসব ঋণ সুনির্দিষ্ট ও সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহারের তাগিদ এই অর্থনীতিবিদের।
তিন মাসে বিদেশি ঋণ এসেছে ৮৪ কোটি ডলার, শোধ ১১২ কোটি ডলার : বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েই চলছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশে যত বিদেশি ঋণ এসেছে, পরিশোধ করতে হয়েছে তার চেয়ে বেশি। এই প্রান্তিকের প্রতি মাসেই ঋণ ছাড়ের চেয়ে পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ ছিল বেশি।
ইআরডি জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদ ও আসল মিলিয়ে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে এই সময়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ঋণ ছাড় করানো সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ এই তিন মাসে ঋণ ছাড়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধ প্রায় ২৮ কোটি ডলার ছিল।