উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ প্রত্যাশা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না

0
24

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের ২৫৭টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়। ঋণদাতাদের আকৃষ্ট করতে অনুমোদন ও বরাদ্দহীনভাবে এসব প্রকল্পের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ হিসাবে ধরা হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে উচ্চ অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২১৭টির, মধ্যম ৩৬ এবং নিম্ন অগ্রাধিকারে আছে ৪টি প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত সরকারের অগ্রাধিকারে এডিপিতে যুক্ত হওয়া বৈদেশিক সহায়তা নির্ভর নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ৪৮টি। এগুলো বাস্তবায়নে ঋণের প্রয়োজন হবে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতের ৪৩ প্রকল্পের জন্য ঋণ লাগবে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ৪২টি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন হবে ৪৩ হাজার ৭২৫ কোটি টাকার ঋণ।
এ ছাড়া অন্যান্য খাতের মধ্যে সাধারণ সরকারি সেবা খাতের ১৩ প্রকল্পের জন্য ১৯ হাজার ২ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবার ১৮ হাজার ৩ কোটি, কৃষির ১৯ প্রকল্পে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতের ১৬ প্রকল্পের জন্য দরকার ৪৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ। আরও আছে স্বাস্থ্য খাতের ৭ প্রকল্পে ৬৬ হাজার ৭৪২ কোটি, ধর্ম ও সংস্কৃতির ৪ প্রকল্পে ৩৩৭ কোটি, শিক্ষার ১৬ প্রকল্পে ১০ হাজার ২১৬ কোটি, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির ৮ প্রকল্পে ৭ হাজার ৮২ কোটি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতের ২ প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন ১৫৬ কোটি টাকা।
এই তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প হলোÑপঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের প্রত্যাশা হচ্ছে ৫৬ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করতে চায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন ৬১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। ঋণ পেলে এটি চলতি অর্থবছর থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সাউথ করিডর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ফরিদপুর-বরিশাল এবং বরিশাল-কুয়াকাটা) ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের প্রত্যাশা ২৮ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর থেকে ২০৩০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে। ওয়াটার ফ্রন্ট স্মার্ট সিটি কেরানীগঞ্জ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৫৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। ২০৩৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এ ছাড়া তুরাগ নদের বন্যা প্রবাহ অঞ্চলের সংরক্ষণ এবং কমপ্যাক্ট টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্য ৪৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। ২০৩৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন লক্ষ্য রয়েছে। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (মেট্রোরেল লাইন-৫) মোট ব্যয় হবে ৫৪ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো, হাওর ফ্ল্যাড অ্যান্ড লাইভলিহুড প্রজেক্ট, জলবায়ু সহনশীল টেকসই জীবিকা প্রসার প্রকল্প, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ভাঙ্গা জয়শন (ফরিদপুর) হতে বরিশাল হয়ে পায়রাবন্দর ও কুয়াকাটা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।